জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে বর্তমান এই সরকার। এতদিন আকারে ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করলেও বর্তমানে অনেকেই সরাসরি বলছেন এ সরকার অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারের জনগণের ম্যান্ডেড নেই। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরী।
নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন, জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনতার সরকারই প্রকৃত সরকার। আর এই ধরনের সরকারের অধীনেই রাষ্ট্রে জনগণ তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। এজন্য অবশ্যই রাষ্ট্রের বেশিরভাগ নাগরিককে সচেতন হতে হবে। যাতে সচেতন জনতা সরকারের প্রতিটা কাজের তদারকির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।
কথাগুলো শুনতে খুব ভালই লাগে। শুনলেই মনে হবে এটাই একমাত্র মুক্তির পথ। প্রথমেই বলতে চাই জনগণের স্বাধীনতা মানে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা নয়। স্বাধীনতা মানে দেশের একটি গোষ্ঠী বা একটি দল বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে, আর অন্যরা থাকবে অবহেলিত। স্বাধীনতার অর্থ এটা নয়, একটি গ্রুপ শাসন করবে আরেকটি গ্রুপ থাকবে সাধারণ জনতার কাতারে। স্বাধীনতার অর্থ এটাও নয় যে,শাসক শোষণ করবে আর জনতা হবে শোষিত।
স্বাধীনতার শাব্দিক অর্থই হচ্ছে অন্যের অধীনে না থাকা। কিন্তু ব্রিটিশ থেকে শুরু করে, এরপর পাকিস্তান পেরিয়ে, সেই একাত্তর সালে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের জনগণ প্রকৃত স্বাধীনতার সুফল কখনো ভোগ করতে পারেনি। প্রত্যেক সময়ই কেউ না কেউ শাসন করেছে, শোষণ করেছে। শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ছাত্র-জনতা বারবার রক্ত দিয়েছে । কিন্তু রক্ত দিয়ে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে নতুন আরেকটি শৃঙ্খলে আমরা আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। নতুন আরেকটি দাসত্বের শৃংখলে কখন যে আবদ্ধ হয়েছি আমরা বুঝতেই পারেনি। যখন বুঝতে পেরেছি তখন জালিম এর থাবা আমাদের উপর অন্ধকার জুলুম নেমে এসেছে, হায়েনারা রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর পুনরায় ছাত্র-জনতা রক্ত দেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে। কিন্তু বারবারই ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে নতুন মোড়কে নতুন করে। একাধিকবার এ জাতি ধোঁকায় পড়েছে।
কিন্তু ২০২৪ এর জুলাই আগস্ট তথাকথিত নয়, বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন নতুন শকুন হায়েনা আমাদের দেশের দিকে আমাদের ছাত্র-জনতার দিকে কুনজর দিচ্ছে। কিন্তু ছাত্র জনতা প্রকৃত শত্রু এতদিন না চিনলেও এবার তারা ঠিকই চিনতে পেরেছে। আর তাই এই ছাত্র জনতা কারো দুষ্টুমিষ্ট কথায় ভুলবে না এটা আমাদের বিশ্বাস। ৪৭, ৭১ কিংবা ৯০ এ আমরা দেখেছি ছাত্র জনতা জেগে উঠেছে রক্ত দিয়েছে দেশকে মুক্ত করেছে, এরপর প্রশান্তিময় নিঃশ্বাসের সাথে আরামে ঘুমিয়েছে। কিন্তু এবার এই ছাত্র জনতা রক্ত দিয়ে পরাধীনতার শৃংখল মুক্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাইনি। তারা জেগে আছে, সারাক্ষণ পাহারায় আছে, দেশ এবং জাতির যেকোনো সংকটে তারা রাস্তায় নেমে পড়ছে। ছাত্র জনতা জেগে উঠেছে, তারা নতুন করে কোন প্রভু দেখতে চায় না।
তাই পরিশেষে বলতে চাই, প্রভু সেজে জনগণকে যারা গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ করতে চায় তাদের মনে রাখা উচিত, যে জাতি বুলেট খাওয়া শিখে গেছে, হায়েনারা তাদেরকে কিসের লোভ দেখায়? যে জাতি রক্ত দেয়া শিখে গেছে, হায়েনারা তাদেরকে কিসের ভয় দেখায়? শহীদি নেশা যাদের অন্তরে গেঁথেছে, কি দিয়ে আসবে তাদের অন্তরের প্রশান্তি? তোমরা আমাদের প্রশান্তি দিতে পারো হয়তো প্রকৃত স্বাধীনতায় নয়তো শহীদি মৃত্যু।